থাইল্যান্ড ভ্রমণের উপযুক্ত সময় কখন? তা জানার আগে থাইল্যান্ড সম্পর্কে খানিকটা জেনে নেই। থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটা রাষ্ট্র। বর্তমানে স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু সময় প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকার জন্য থাইল্যান্ডের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। থাইল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অভিভূত হয় পর্যটকরা। পাশাপাশি একমাত্র যুদ্ধচলাকালীন সময় ব্যতীত উপনিবেশ না হওয়ায় থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি বেশ পরিপূর্ণ। তাই পর্যটকরাও চায় থাইল্যান্ডের শহুরে জীবন এবং গ্রাম্য জীবন উপভোগ করতে তাও স্বল্প সময়ে এবং স্বল্প খরচে।
যেহেতু থাইল্যান্ডে আছে বেশ কয়েকটি দ্বীপ। তাই এখানকার আবহাওয়া পর্যটকদের জন্য সবসময় সমভাবাপন্ন নয়। ঋতু আর মাসভেদে থাইল্যান্ডে ঘোরার সময় নির্বাচন করা হলে স্বল্প সময়ে দারুণ একটা ভ্রমণ হতে পারে- থাইল্যান্ড ট্যুর। আর তাই আজকের আয়োজনে থাকছে থাইল্যান্ড ভ্রমণের উপযুক্ত সময় নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা।
- শুরুতেই বলে নেয়া উচিত যে, থাইল্যান্ডের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের আবহাওয়া একদমই ভিন্ন। আবার শহর এলাকায় একরকম আর দ্বীপ এলাকায় অন্যরকম। হয়তো শহরে উষ্ণ আবহাওয়া আর দ্বীপে শীতল। তবে সাধারণত পর্যটকদের বিচারে বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস অবধি থাইল্যান্ডের আবহাওয়া ঘুরাঘুরির জন্য একদম পারফেক্ট। এই সময়টায় থাইল্যান্ডের ঋতু হিসেবে শীতকাল চলে। তাই গরম থাকে সহনীয় পর্যায়ের। রোদ থাকলেও রোদের তাপ গায়ে লাগে না কিংবা তা সহ্য করার মতোই থাকে। আকাশ থাকে বৃষ্টিমুক্ত। তবে মাঝেমধ্যে আকাশে মেঘের ঘনঘটা লক্ষ্য করা যায়। এবং ক্ষনিকের জন্য এক স্নিগ্ধ আবহাওয়া উপহার দিয়ে বিদায় নেয় সাময়িক বৃষ্টি।
- আবার, যদি কেউ থাইল্যান্ডের সবুজ নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আর প্রাকৃতিক দৃশ্য পেতে চায় তবে গরমকাল ভালো হবে। তখন প্রকৃতি একদম ঝলমলে ছবির মতোই স্বচ্ছতা ধারণ করে। এপ্রিল থেকে জুলাই মাস এই জন্য শ্রেয়। তবে এ সময়ে গ্রীষ্মকাল চলে। তাই গরম আবহাওয়া বিরাজমান থাকে। এবং তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এপ্রিলের শেষ দিকে থাইল্যান্ডের আবহাওয়া অত্যধিক আর্দ্র হয়ে যায় এবং গরম পর্যটকদের জন্য অসহনীয় মাত্রায় চলে যায়। তবে এপ্রিলের শেষ থেকে অক্টোবর অবধি থাইল্যান্ডে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
- এমনকি জায়গাভেদে বন্যা পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়। গ্রামীন জনজীবন বিপন্ন হয় এবং নৌকা সংকট দেখা দেয়। তাই, সাধারণত এই সময়টায় থাইল্যান্ডে ঘুরতে যাওয়া মোটেও উপভোগ্য হবার কথা নয়। তবে এই সময়টা একদমই যে উপভোগ্য হবে না তাও কিন্তু নয়। কেননা, থাইল্যান্ডের আবহাওয়ার ভিন্নতা পরিল্লক্ষিত হয়। তবে থাইল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টি সত্ত্বেও সূর্যের দেখা পাওয়া যায় এবং পরিষ্কার আকাশ লক্ষ্য করা যায়। আর পর্যটকের সংখ্যাও থাকে একদমই শূন্যের কোঠায়। তাই আপনি যদি কোলাহলশূন্য সমুদ্র সৈকত আর দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে এই সময়টায় যেতে পারেন।
আবার, আপনি যদি জায়গাভেদে ঘুরতে যেতে চান তাহলে আপনাকে ভিন্নভাবে পরিকল্পনা করতে হবে।
- থাইল্যান্ডের অনেক দ্বীপের মধ্যে কোহ তাও, কোহ ফানগান এবং কোহ সামুইসহ আরও বেশ কিছু দ্বীপ মোটামুটি শুকনো এলাকা বলে পরিচিত। তাই এইসব দ্বীপ ঘুরার জন্য সেপ্টেম্বরের শেষ বা নভেম্বরের মধ্যে গেলেও ভালো। তবে সবচাইতে ভালো আর উপভোগ্য ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস– এই সময়টা।
- থাইল্যান্ডের মূল আকর্ষণ এর রাজধানী ব্যাংকক। তবে ব্যাংকক সারাবছরই আর্দ্র আর বেশ গরম থাকে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস শীতকাল হওয়ায় ব্যাংককের গরম সহনীয় পর্যায়ে থাকে। তবে এর পরের মাস থেকেই পরবর্তী ৪/৫ মাস ব্যাংককের তাপমাত্রা অনেক ক্ষেত্রে অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে যায়।
- থাইল্যান্ড পশ্চিম আর আন্দামান সাগরের নিকটবর্তী দ্বীপ যমেওন- ফুকেট, ক্র্যাবি, কোহ ফি ফি, কোহ লান্তাসহ আরও কয়েকটি দ্বীপ ভ্রমনেরও সেরা সময় হচ্ছে ডিসেম্বর আর জানুয়ারি। তবে ডিসেম্বরের আগের একমাস এবং জানুয়ারির পরের দুই মাসও এখানকার আবহাওয়া চমৎকার থাকে।
থাইল্যান্ডের সাংস্কৃতিক যেসব উৎসব আপনার ভ্রমণকে আরও খানিকটা চাঙ্গা করে তুলতে পারে সেগুলোর কথাও জেনে রাখা উচিত।
- চাইনিজ বর্ষবরণ: জানুয়ারি অথবা মার্চ মাসে ব্যাংককের চায়না টাউনে চাইনিজ বর্ষবরণ উৎসব উদযাপিত হয়। এসময় চায়না টাউন সাজে বর্ণীল রূপে আর রাস্তায় রাস্তায় বসে মেলা। সন্ধ্যায় আকাশে দেখা মেলে আতসবাজির।
- ফ্লাওয়ার ফেস্টিভ্যাল এবং মাখা বুচা: ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছিয়াং মাইতে হয় ফুল ফেস্টিভ্যাল। এসময় পুরো শহর আর দ্বীপগুলোতে প্রকৃতি ফুলের পসরা সাজিয়ে বসে যেন। মাখা বুচা হচ্ছে থাইল্যান্ডের ধর্মমতে পবিত্র একটি দিন। এদিন ধর্মীয় গাম্ভীর্যতার সাথে উদযাপন করা হয়।
- সাংক্রান উৎসব: এপ্রিলের ১৩ থেকে ১৫ তারিখ আবার থাইল্যান্ডের সাংক্রান উৎসব। এটা থাইল্যান্ডের সংস্কৃতির বর্ষবরণ উৎসব। সুগন্ধী পানি রাস্তায় এবং পথিকদের উপর ছিটিয়ে পাপসমূহ ধুয়ে ফেলার প্রতীকী আয়োজন করা হয়।
- ভেজেটেরিয়ান ফেস্টিভ্যাল: মাঝের সময়টাতে ঘরোয়া বেশ কিছু উৎসব চললেও অক্টোবরের ভেজেটেরিয়ান ফেস্টিভ্যাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চাইনিজ বিশ্বাস মতে চন্দ্রমাসের হিসেবে নবমতম মাসে শাকসবজি খেলে পুরো বছর মন আর দেহ, সুস্থ এবং আশীর্বাদে থাকে।
- গোল্ডেন মাউন্ট টেম্পল ফেয়ার: ব্যাংককের ওয়াট সাকেটের গোল্ডেন টেম্পলে চলে দীর্ঘতম টেম্পল ফেস্টিভ্যালের আয়োজন। নভেম্বরের পূর্ণ চাঁদ ওঠার এক সপ্তাহ আগে থেকে শুরু হয় এই আয়োজন। পুরো শহরের রাস্তা জুড়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পবিত্র লাল চাদর নিয়ে আসা হয় মন্দিরে এবং এর চূড়ার ছেদিতে পরানো হয়। সপ্তাহব্যাপী চলা আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক ফোক মিউজিক, খাবার দাবার এবং বিনোদনের আরও ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
- লই ক্রাথং: পূর্ণ চাঁদ দেখার প্রাক্কালে থাইল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় উৎসবের আয়োজন করা হয় যার নাম লই ক্রাথং। হাতে বানান কলাগাছের ভেলা বা বিভিন্ন ঝুড়িতে করে খাবার দাবার ফলমূল বা প্রতীকী জিনিস নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে প্রার্থণা করা হয়।
- ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অফ ড্যান্স এণ্ড মিউজিক: বিশ্বব্যাপী সমাদৃত আর জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক এই ফেস্টিভ্যাল জমকালো আয়োজনের ব্যবস্থা করে থাকে। সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসে এই আয়োজন করা হয়ে থাকে।
This post is also available in:
English