পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় প্রাধান্য পায় থাইল্যান্ড। দিন দিন থাই দেশটির জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে । থাইল্যান্ডে ঘুরেবেড়ানোর স্থানের অভাব নেই। কিন্তু যারা প্রথমবার থাইল্যান্ডে যান তাদের থাইল্যান্ডের বিষয়ে কিছু কয়েকটি জিনিস জানা খুবই জরুরী। থাইল্যান্ড ট্যুরে ভুলেও ১০ টি কাজ করবেন না এতে ট্যুরের মজা মাটি হতে পারে। তাই এই তথ্য গুলো গুরুত্বপূর্ণ। যে ১০টি কাজ এড়িয়ে যাবেন থাইল্যান্ডে সে বিষয়গুলোর বিস্তারিত আজ লেখাটি।
১। পার্কিং ট্যাক্সিতে উঠবেন না

থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পটগুলোত পাশে পার্ক করা অনেকগুলো ট্যাক্সি দেখতে পাবেন। সাথে দেখবেন পার্ক করা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই ট্যাক্সির ড্রাইভার আপনাকে ডাকছে। কিন্তু ট্যুরিস্টরা এই ট্যাক্সিগুলো এড়িয়ে যান। কারণ এই ট্যাক্সিগুলো অপেক্ষা করে ট্যুরিস্ট স্পট থেকে আসা ক্ল্যান্ত ট্যুরিস্টদের জন্য। যারা কিছু বিবেচনা না করে ট্যাক্সিতে যাবেন আর ট্যাক্সিগুলো তাদের কাছ থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বীগুন বা তিনগুন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করবে। আর একারণেই এসব ট্যাক্সি বাদ দেন সচেতন ট্যুরিস্টরা। তাই থাইল্যান্ড ট্যুরে বাদ দিন পার্ক করা ট্যাক্সি।
২। জাতীয় সংগীতের সময় দাঁড়াতে ভুলবেন না
থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন আপনার কাছে হাসির বিষয় হতে পারে কিন্তু থাইদের কাছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। থাইল্যান্ডের সব সিনেমা হলে সিনেমা শুরুর আগে থাই রাজ সংগীত বাজানো হয় এবং প্রত্যেকে সম্মান প্রদর্শন করে দাড়াতে হয় । এসময় ভুলেও বসে থেকে থাইদের কাছে ছোট হবেন না।
এবার আসি থাই জাতীয় সঙ্গীতের বিষয়ে। ট্রেন স্টেশন এবং মার্কেটের মতো সব পাবলিক প্লেসে সকাল ৮ টা এবং সন্ধ্যা ৬ টার সময় থাইল্যান্ড জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। এসময় চলাচল না করে দাড়িয়ে থেকে সম্মান প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক।
৩। থাইল্যান্ডে নারীরা সন্ন্যাসীর পাশে বসতে পারেন না

বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা কিছু নিয়ম মেনে চলেন। এনিয়মগুলো মেনে চলা তাদের কাছে বাধ্যতামূলক। যার মধ্য রয়েছে সন্ন্যাসীরা কোন নারীকে স্পর্শ করতে পারবেন না। তাই তাদের পাশাপাশি বসতে যাবেন না যদি আপনি নারী হন। এমনকি গণপরিবহনে চলাচলের সময়ও কোন সন্ন্যাসী থাকলে তার থেকে কমপক্ষে ১ মিটার দূরে সরে বসুন। এটাই থাইল্যান্ডের নিয়ম। এবং চেষ্টা করুন যখন বাইরে যাবেন সন্ন্যাসীদের সুবিধার জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে।
৪। নাইট ক্লাবে ড্রিংকস সম্পূর্ণ বোতল কিনুন
থাইল্যান্ডে নাইট ক্লাবের কমতি নেই। তাই ট্যুরের মাঝে থাই নাইট ক্লাবের স্বাদ নিতে যেতে পারেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে কোন ড্রিংকস বা পানীয়র গ্লাস কিনা থেকে বিরত থাকুন। বরং পুরো বোতল কিনুন। কারণ থাইরা সম্পূর্ণ ড্রিংকস কিনে ভাগ করে খায়, যদি আপনি তাদের মত করেন তাহলে তারা আপনাকে সাদরে গ্রহণ করবে এবং ট্যুরিস্ট হিসেবেও বেশি সম্মান দেখাবে।
৫। সবসময় পাসপোর্টের সাথে রাখবেন না

দেশের বাইরে গেলে পাসপোর্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। কারণ একটি পাসপোর্ট প্রমাণ করে আপনার জাতীয়তা। দেশের বাইরে কোন সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে পাসপোর্ট জরুরী। কিন্তু তাই বলে থাইল্যান্ডে সব সময় পাসপোর্ট সাথে রাখবেন না। ছিনতাই , চুরি কিংবা পকেটমার হয়ে হারাতে পারেন আপনার পাসপোর্টি।
যেকোন সমস্যা এড়াতে সবসময় সাথে রাখুন আপনার পাসপোর্টের ফটোকপি। আর পাসপোর্টি নিরাপদে হোটেলে রাখুন।
৬। মন্দিরে শর্টস বা স্কার্ট পরা থেকে বিরত থাকুন

বৌদ্ধধর্ম থাইল্যান্ডে প্রধান ধর্ম । থাইল্যান্ডে রয়েছে হাজার হাজার মন্দির। অপূর্ব কারুকাজের মন্দিরগুলো বহন করে থাইল্যান্ডের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি। পর্যটকরা থাইল্যান্ডে এসে চমৎকার মন্দিরগুলো ঘুরে দেখেন।
থাইল্যান্ডে মন্দির দেখার সময় শর্টস বা স্কার্ট পরবেন না। হাঁটুর নিচ পর্যন্ত যায় এমন পোশাক পরুন। টপসলেস ভাবেও থাইল্যান্ডের মন্দিরে যাবেন না।
৭। পা দিয়ে থাই বাত স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন

থাইল্যান্ডর কারেন্সি থাই বাত। যদি থাইল্যান্ডের কোথাও দেখতে পান থাই বাত পরে আছে তাহলে ভুলক্রমেও পা দিয়ে উঠাতে যাবেন না। থাই ধারণা অনুযায়ী মানুষের দেহের সবচাইতে পবিত্র অংশ মাথা, যার সাথে স্বর্গের যোগাযোগ রয়েছে। আর পা হচ্ছে মানব দেহের সর্বনিম্ন অংশ আর সবচাইতে অপবিত্র অঙ্গ। তাই থাইল্যান্ডের বাতে কখনো পা লাগাবেন না।
শুধু এটি নয় থাইল্যান্ডের কোন গুরুত্বপূর্ণ জিনিসি পা দিয়ে স্পর্শ করবেন না। এটি তাদের কাছে আপনাকে খুবি খারাপ লোক হিহেসে পরিচয় করিয়ে দেয়। এবং তারা আপনার উপর ক্ষুদ্ধ হতে পারে।
৮। টিস্যু সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না
থাইল্যান্ডে ট্যুরে আপনার সাথে সবসময় টিস্যু রাখুন। থাই বাজার আর রেস্টুরেন্টগুলোতে যাওয়ার সময়ও টিস্যু সঙ্গে রাখার বিষয়টি ভুলে যাবেন না। কারণ যেকোন রকমের অনাকাঙ্খিত ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে একটি টিস্যু। যেমন হুট করে চলার পথে আপনার পায়ে ময়লা লাগতে পারে আবার আপনার পোশাকের নোংরা পরিষ্কার করার জন্যও টিস্যু প্রয়োজন। অপরিষ্কার থেকে হাসির পাত্র না হওয়াই ভালো।
৯। পানি কিংবা বরফ নিয়ে বাড়তি চিন্তা নয়
আপনার থাই ট্যুরের সময় আপনাকে পানি পরিষ্কার কিনা , পানি কোথায় পাবো অথবা তারা যে বরফ দিচ্ছে এটা নিরাপদ কিনা এ বিষয়ে ভাবতে হবে না। কারণ থাইরা পানির বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন। কিন্তু তাই বলে সরাসরি কল থেকে পানি না খাওয়াই ভালো।
আর থাইল্যান্ডে বরফের কারখানা রয়েছে, সেখান থেকেই বরফ তৈরি করা হয় তাই দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
১০। থাইদের মাথা স্পর্শ করবেন না
একেক দেশের ধারণা বিশ্বাস একেক রকম। থাই বৌদ্ধ ঐতিহ্য অনুসারে মাথাকে দেহের সর্বোচ্চ অঙ্গ এবং স্বর্গের নিকটতম স্থান বলে মনে করা হয়। এবং তারা বিশ্বাস করেন মাথা সবচাইতে পবিত্র অঙ্গ। আর তাই কোন অচেনা ব্যক্তি তাদের মাথা স্পর্শ করলে তারা বিরক্ত হন। এটি তাদের কাছে খুবই আপত্তিজনক। তাই কখনোই থাইদের মাথায় হাত দিবেন না।
সব দেশের নিয়ম , বিশ্বাস, ধ্যান ধারণা এক নয়, দেশভেদে এটি ভিন্ন হয়। তাই কোথায় ভ্রমণ বা ট্যুরে বের হওয়ার আগে এগুলো জেনে নেওয়াই ভালো। থাইল্যান্ড ভ্রমণে এই তথ্য গুলো আপনার খুবই কাজে লাগবে বলে আশা করি।