ব্যাংকক যদি হয় রঙিন শহর আর পাতায়া যদি হয় হানিমুন স্পট, তাহলে ফুকেট হচ্ছে এক স্বপ্নরাজ্য। থাইল্যান্ডের দক্ষিণে অবস্থিত এই দ্বীপটি স্থানীয় ভাষায় থালংগ নামে পরিচিত। মালয় ভাষায় বুকেট থেকেই ফুকেট নামের আগমণ, যার অর্থ পাহাড়। শহরের আভিজাত্য আর সৈকতের নৈসর্গিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। আর তাই হয়তো ফুকেটকে নির্ঘুম শহরের আখ্যা দেয়া হয়। অর্থাৎ যে শহর কখনো ঘুমায় না। ফুকেটে এসে কোথায় ঘুরবেন? কি কি করবেন? এসব নিয়ে আপনাকে যেন চিন্তায় না থাকতে হয়; তাই আজকের আয়োজনে থাকছে- ফুকেটের দর্শনীয় স্থানসমূহের বিবরণ।
একনজরে ফুকেটের দর্শনীয় স্থান
- ফুকেট ফ্যান্টাসী
- সিয়াম নিরামিত ফুকেট
- বাংলা বক্সিং স্টেডিয়াম
- টারজান অ্যাডভেঞ্চার ফুকেট
- ডলফিন বে ফুকেট
- জেমস বন্ড আইল্যান্ড ট্যুর
- ওয়ান ডে ফি ফি আইল্যান্ড ট্যুর
- সিমিলিয়ান আইল্যান্ড ট্যুর
- ফুকেট ট্রিকআই জাদুঘর
- ফ্লাইং হানুমান
01. ফুকেট ফ্যান্টাসী

ফুকেট বেড়াতে এলে ফুকেট ফ্যান্টাসীতে না আসাটা বোকামিই হবে বটে। কেননা, “বেস্ট এট্রাকশন অ্যাওয়ার্ড” জেতা একটা স্থান যদি স্বচক্ষে ঘুরে না দেখেন তাহলে আফসোস তো থেকেই যাবার কথা। হ্যাঁ, লাস ভেগাসের মতোই ঝলমলে আর আকর্ষণীয় হওয়ায় এখানে টুরিস্টদের সংখ্যা অনেক বেশি এবং তাই এই জায়গাটি এমন অ্যাওয়ার্ড জিতেছে। ঝলমলে কালচারাল শো, অসাধারণ সেট ডিজাইন, বিচিত্র পোশাক আর চিত্তাকর্ষক সাউন্ড সিস্টেম এর কারণে জায়গাটি এরই মধ্যে বেশ আকর্ষণের জায়গা হয়ে উঠেছে। আর শো শেষে মুখরোচক বুফে ডিনার তো থাকছেই!
১৪০ একরের বিশাল থিম পার্ক থাকছে এতে। সাথে থাকছে চমৎকার সব ভাস্কর্য ও স্থাপনা। গেম খেলার ব্যবস্থা, হস্তশিল্প সহ আরো অনেককিছুও থাকছে। এখানে থাই কালচার আর প্রাচীণ থাই ঐতিহ্যের অসাধারণ সন্নিবেশ ঘটেছে। ঐতিহ্যের পাশাপাশি এখানে প্রযুক্তির দিকেও মনোযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, এতে অবারিত স্বাধীনতা, আনন্দ আয়োজন, দৃঢ় ও প্রতিজ্ঞ অ্যাক্ট মিলিয়ে থাই সত্ত্বাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শোতে থাকছে ৪৪টি হাতি, ৩টি বাঘ, ৪০টি মুরগী ও ৪০০টি কবুতর। ৪০০ জন অভিনেতা ও ক্রু মেম্বার মিলে এই অসাধারণ শো-টি সঞ্চালন করবে। থাইল্যান্ডের এই বিখ্যাত শো দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হবেন আপনিও।
02. সিয়াম নিরামিত ফুকেট

সিয়াম নিরামিত শো ফুকেটের অন্যতম জনপ্রিয় একটি শো। থাই সংস্কৃতির সাথে প্রযুক্তি আর পারফর্ম্যান্সের অবাক করা এক অনুষ্ঠানে আপনি মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। থাই সংস্কৃতি যে অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ তা জানা এবং বুঝা যাবে এই শোতে। পারফর্মাররা তাদের নিখুঁত দক্ষতার মাধ্যমে থাই সংস্কৃতির বিভিন্ন গল্প তুলে ধরে এবং মঞ্চকে মাতিয়ে রাখে।
পারফর্মারদের পারফরম্যান্স, রোমাঞ্চকর নাচ, অ্যাক্রোব্যাটিক্স এবং মার্শাল আর্ট আপনাকে অবাক করে দিবে। প্রি-শো উপভোগ করতে তাড়াতাড়ি আসতে হবে।
শো শেষে আছে পেটপূজার সুব্যবস্থা। যেখানে থাই এবং আন্তর্জাতিকমানের খাবারের ব্যবস্থা থাকছে। আর থাকছে ড্রিংকস এবং স্ন্যাকসের আয়োজনও। বিস্তারিত জেনে নিন।
03. বাংলা বক্সিং স্টেডিয়াম

ফুকেটে এই মুয়াই ফাইটিং স্টেডিয়ামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে, নারী এবং পুরুষ উভয়রাই খেলতে আসে। আর যদি আপনি জানতে চান যে, এই বাংলা বক্সিং স্টেডিয়াম কেন এত বিখ্যাত? তাহলে অবশ্যই আপনাকে স্বচক্ষে এসে তা দেখে যেতে হবে। আপনি হয়তো আগে টেলিভিশনে এই ধরণের বক্সিং দেখে থাকবেন কিন্তু বাস্তবে দেখার মজাই আলাদা।
আপনি স্টেডিয়ামে উত্তেজিত আর রোমাঞ্চিত এক জনতার মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করবেন যারা তাদের পছন্দের ফাইটারের জন্য চিৎকার-চেঁচামেচি আর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। ফাইটারদের মার্শাল আর্ট এবং বক্সিং দক্ষতা দেখে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। ফুকেটের এই বিশ্বস্ত এবং জনপ্রিয় বক্সিং স্টেডিয়ামটি আপনাকে আন্তর্জাতিক মানের এবং দুর্দান্ত আর রোমাঞ্চকর এক অনুভূতি দেবে। তাই দেরি না করে সময় নিয়ে চলে আসুন। তবে আসার আগে বিস্তারিত জেনে নিন।
04. টারজান অ্যাডভেঞ্চার ফুকেট

টারজানের মতো এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছুটে চলার রোমাঞ্চকর অনুভূতি মুখে বলে বোঝান সম্ভব হয়। হ্যাঁ, ফুকেটের টারজান অ্যাডভেঞ্চার পার্কটিও এমনই একটি রোমাঞ্চকর অনুভূতি দেবে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের। সবুজে ঘেরা এই পার্কের একটিভিটিগুলো ক্ষণিকের জন্যে হলেও আপনাকে টারজানের জগতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। টারজান নামটির সার্থকতার জন্যই এর একটিভিগুলোও তেমন করেই সাজানো হয়েছে।
টারজান অ্যাডভেঞ্চারের এই জিপলাইনটি ফুকেটের সেরা জিপলাইন তা আপনি একটিভিটি শেষে মানতে বাধ্য হবেন। এখানে আপনি পাবেন- ১৭টা প্লাটফর্ম, ১৫টা কাঠের ব্রীজ, ৩টা নেটের ব্রীজ, ৩টা স্লিং ওয়াকিং, ২টা রোপ ওয়াকিং, একটা ক্লাইম্বিং এবং একটা স্কেটবোর্ড। ঘন সবুজ এবং বিশাল পাহাড়ের আড়ালে আপনি নিজেকে একটিভিটিতে ব্যস্ত অবস্থায় আবিষ্কার করবেন। আর বাদবাকি বিস্তারিত এখান থেকে জেনে নিন।
05. ডলফিন বে ফুকেট

ডলফিন বে এমন একটি স্থান যেখানে আপনি আপনার পরিবারের একদম বয়োজ্যেষ্ঠদের থেকে শুরু করে একদম কনিষ্ঠদেরও নিয়ে আসতে পারবেন। আর উপভোগ করতে পারবেন দারুণ কিছু মুহূর্ত। প্রাণীজগতের মধ্যে ডলফিনের বুদ্ধি বেশ প্রখর এবং ওগুলো বেশ মিশুকও বটে। ডলফিনগুলি কেবল বুদ্ধিমানই নয়, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত; যা আপনাকে নিশ্চিতভাবে অবাক করবে। ডলফিন বে ফুকেটে ডলফিনের সাথে ডুব দিন বা সাঁতার কাটুন যার মাধ্যমে আপনি প্রাণীগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখতে পাবেন।
অ্যালিস, অ্যামি, মায়া, ক্যাস্পার এবং গ্রান্ড ডলফিনদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ুন এবং ফুকেটের সেরা বিনোদন কেন্দ্র থেকে ঘুরে আসুন। আর মাসা এবং পাঞ্চিক নামের সীলগুলা তো আছেই আপনাকে বিনোদন দিতে। এই প্রাণীগুলো কতটা বন্ধুসুলভ এবং কতটা মিশুক তা কেবল আপনি ওদের সাহচর্যে গেলেই বুঝতে পারবেন। বিস্তারিত এখান থেকে জানা যাবে।
06. জেমস বন্ড আইল্যান্ড ট্যুর

জেমস বন্ডের ঐ মুভিটার কথা মনে আছে ‘দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গান’? ওই মুভির শ্যুটিং হয়েছিল এই দ্বীপে যার জন্যে এর নামকরণ করা হয়েছে জেমস বন্ড আইল্যান্ড। তবে এই দ্বীপের নিজস্ব কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে-যার মধ্যে স্বচ্ছ সবুজাভ জল এবং চুনাপাথরের খাড়া ভাসমান পাহাড়। তবে এই দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের সুরক্ষার অধীনে থাকার কারণে এর একদম কাছাকাছি যাওয়ার অনুমতি নেই। তাই এই দ্বীপ দেখার অন্যতম সেরা দুটি উপায় হচ্ছে – নৌকায় করে অথবা কোহ পিং ঘানের ছোট সৈকত থেকে।
কোহ পিং ঘান হচ্ছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের আরেক উদাহরণ। এর ভিতরে ছোট ছোট গুহা রয়েছে যেগুলো ঘুরে ঘুরে দেখাটা এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি দেবে। কায়াকিংয়ের জন্য এটি ব্যাপক জনপ্রিয় একটি স্থান। নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘুড়ে বেড়ানোর পাশাপাশি থাকছে সতেজ আর তাজা খাবার গ্রহণের সুযোগ। বিস্তারিত জেনে নিন।
07. ওয়ান ডে ফি ফি আইল্যান্ড ট্যুর

সাগর, বন আর পাহাড়ের মিশেলে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে গুছিয়ে সাজিয়েছে ফি ফি আইল্যান্ডকে। প্রকৃতি প্রেমিদের কাছে তাই ফি ফি আইল্যান্ড হচ্ছে অবারিত এক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সুনীল সাগরের ফেনীল ঢেউ, সঙ্গে উঁচু ভাসমান খাড়াই যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে প্রকৃতিপ্রেমিদের। চুনা পাথরের খাড়াই, অসাধারণ বনানীর সৌন্দর্য, সুনীল সাগর, শুভ্র বালিয়াড়ি- এসবই আপনাকে মুগ্ধ করবে।
এই স্বচ্ছ সুনীল জলে আপনি স্কুবা এবং স্নোরকেলিং করতে পারবেন। এছাড়া সাঁতার এবং কায়াকিং তো থাকছেই। আরও থাকছে মায়া বে, ব্যাম্বু আইল্যান্ড, মাঙ্কি বিচ, ভাইকিং কেভ ইত্যাদি। ঝটপট একদিনের এই ট্যুরটি বুক করে ফেলুন। বুকিং করা যাবে এখান থেকে।
08. সিমিলিয়ান আইল্যান্ড ট্যুর

সাদা বালির সৈকত, গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন্যজীবন, আকর্ষণীয় দ্বীপপুঞ্জ, শ্বাসরুদ্ধকর ভূগর্ভস্থ সমুদ্র, প্রবাল প্রাচীর এবং বিরল সমুদ্রের প্রাণীর অভয়ারণ্য দেখার ইচ্ছা কার না আছে? এমনই সব দারুণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভান্ডার নিয়ে অপেক্ষায় আছে সিমিলিয়ান আইল্যান্ড।
সামুদ্রিক জীবন এবং প্রবাল প্রাচীরের সাথে খানিকটা সময় কাটাতে চাইলে আপনিও ডুব দিতে পারেন স্বচ্ছ সুনীল সাগরের জলে। শহুরে ব্যস্ত জীবন থেকে প্রকৃতির আচ্ছাদনে ডুবে যেতে চাইলে ঘুরে আসুন সিমিলিয়ান আইল্যান্ড। বিস্তারিত জানুন।
09. ফুকেট ট্রিকআই জাদুঘর

ফুকেটের প্রাণকেন্দ্রেই অবস্থিত এই জাদুঘরটিও টুরিস্টদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় একটি স্পট। অন্যান্য জাদুঘরের তুলনায় এটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এবং একদমই আলাদা। এই জাদুঘরের পেইন্টিংসগুলো একদমই জীবন্ত আর থ্রিডি ইল্যুশনে ভরা। এখানে এসে এই থ্রিডি ইল্যুশনে ছবি তোলার সুযোগ আপনিও পাবেন। এই ফটোগ্রাফি ইল্যুশনগুলো এতটাই জীবন্ত যে, নিজেকে পেইন্টিংসের অংশ বলে বিভ্রম হবে।
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, ভ্যান গগ, মিলেত এমন কেউ নেই যে যার ছবি এখানে নেই। প্রায় একশোর মতো পেইন্টিংস আছে পুরো গ্যালারী জুড়ে। দারুণ আর মনোমুগ্ধকর এই গ্যালারীতে দারুণ কিছু সময় উপভোগ করুন এবং সুন্দর কিছু স্মৃতি সাথে করে নিয়ে যান। বিস্তারিত জেনে নিন।
10. ফ্লাইং হানুমান

টারজান কিংবা মোগলির কথা মনে আছে? গাছ থেকে গাছে লাফিয়ে চলার অদ্ভুত আর রোমাঞ্চকর এক অনুভূতি। তবে বাস্তবেও এমনটাই সম্ভব। ফুকেটের ফ্লাইং হনুমান আসলে এমনই বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে সকল দর্শনার্থীদের জন্য।
ফ্লাইং হনুমানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়টা হচ্ছে এর জিপলাইনিং। আপনি হনুমান অ্যাডভেঞ্চারের অংশ হিসেবে প্রায় আটাশটি প্ল্যাটফর্ম উপভোগ করতে পারবেন। দুটি ফ্লাইং পয়েন্ট, তিনটি সর্পিল সিঁড়ি, দুটি আকাশ সেতু, একটি স্কাইরেল এবং বিশ মিনিটের জন্য প্রকৃতিতে দুর্দান্ত বিচরণসহ আরও নানাবিধ বিনোদনের সুযোগ।
টানা তিনঘণ্টা এমন রোমাঞ্চকর অনুভূতি শেষে নিশ্চয়ই আপনার প্রচণ্ড ক্ষুধাভাব হবে। মৌসুমি আর তাজা ফলের স্বাদে আপনি হয়ে উঠবেন চাঙ্গা আর পাবেন অতুলনীয় সব স্বাদ। গাছ থেকে গাছে ঝুলে সারাজীবনের জন্য একটা দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য চলে আসুন ফ্লাইং হনুমানে। একটি হনুমান টি-শার্ট থাকছে স্মৃতিস্মারক হিসেবে। বিস্তারিত পাবেন এখানে।