ভ্রমণ বা ট্যুর আমাদের অবসাদ দূর করে, মনকে করে অনেক উৎফুল্ল। এমন অনেকেই আছেন যারা প্রতিমাসেই কোথাও না কোথাও বেড়িয়ে পরেন ভ্রমণের স্বাদ আহরণে। তবে সব কাজের জন্য যেমন উপযুক্ত সময় থাকে। ঠিক তেমনি ট্যুর বা ভ্রমণের ক্ষেত্রেও সঠিক সময় নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি সঠিক সময় নির্বাচন না করেই ট্যুরে যান সে ট্যুর কিন্তু আবসাদ দূর করার বদলে বিরক্তি বা ভোগান্তির কারণ হতে পারে। এজন্য ট্যুরে যাওয়ার আগে জেনে নেওয়া দরকার আপনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানে কি ট্যুরের জন্য উপযুক্ত সময় চলছে কিনা।
সাধারণত ভ্রমণের সময় ২ ভাগে ভাগ করা হয় একটি হাই সিজন অন্যটি লো সিজন। মূলত আবহাওয়ার হাবভাব বিবেচনা করে এই হাই আর লো সিজনে ভাগ করা হয়। কোন আবহাওয়া ট্যুরের জন্য উপযোগি আর কোন আবহাওয়া অনুপযোগী সেটা দেখেই পর্যটকরা ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়ে পরেন।
আমাদের দেশের জন্য

আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ি ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এ সময়টি ট্যুরের জন্য একদম পারফেক্ট সময়। এটি হাই সিজন। এসময়ের আবহাওয়া ভ্রমণের জন্য উপযোগী থাকে। তাই এসময়ে কোন ঝামেলা ছাড়াই ভ্রমণ সম্ভব। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি আসলেই আমাদের দেশের পর্যটকরা ব্যাস্ত হয়ে যান। প্রকৃতি তার রুপ দিয়ে প্রাণ জুরিয়ে দিতে চায় ভ্রমণপ্রেমিদের। ঠিক যেন প্রকৃতি তাদের অপেক্ষায় ছিলো।
বাংলাদেশ বর্ষার সময় ভ্রমণের অনুপযোগী । এসময় আপনি ভ্রমণে গেলে পরবেন নানা বিড়ম্বনায়। তাই এসময় অনেকেই এড়িয়ে চলেন ভ্রমণের জন্য। আর সাথে ছোট বাচ্চা থাকলে তো আরো বেশি সমস্যা। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলগুলো ভ্রমণের জন্য একদমই নিরাপদ নয় বর্ষায়। কারণ পাহাড় ধস খুব বেড়ে যায় তখন।
দেশের বাইরে ট্যুর
ইউরোপ মহাদেশ

অনেকেই আছেন যাদের ড্রিম হচ্ছে ইউরোপ ট্রিপ। কিন্তু শুধু প্ল্যান করলেই তো চলবে না জানতে হবে তো কখন যাবেন ইউরোপ ভ্রমণে। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি এই সময় ইউরোপে শীতকাল। ইউরোপ ভ্রমণের জন্য লো বা ডাউন সিজন শীতকাল।
শীতে বেশিরভাগ সময়ে তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৫ ডিগ্রি থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এময়ে ইউরোপে ভ্রমণের জন্য একদম অনুপযোগী। প্রায় সময় তুষারপাত লেগেই থাকে। ট্যুরে গিয়ে গৃহবন্দী থাকতে হবে আবহাওয়ার কারণে। হাড় কাপানো শীতে আপনি ঘুরতে তো পারবেনই না সারাদিন থাকতে হবে ঘরের ভেতরে। সাথে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি তো আছেই। তাই এসময়ে ইউরোপ ট্যুরের জন্য লো বা ডাউন সিজন থাকে।
ইউরোপে ট্যুরের জন্য গ্রীষ্মকাল আদর্শ। পিক সিজন চলে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত । অনেকে জুন থেকে আগস্ট গ্রীষ্মের মাসগুলোকে ইউরোপে যাওয়ার সেরা সময় হিসাবে বিবেচনা করেন। কারণ গ্রীষ্মের আবহাওয়ায় আপনি ট্যুরের আসল মজা উপভোগ করতে পারবেন। প্রকৃতির নানা রুপের ডালি সাজিয়ে অপেক্ষা করে এসময়ে।
এটি ইউরোপ ভ্রমণের হাই সিজন থাকায় এসময় হোটেলগুলো আগে থেকেন বুকিং দেওয়া থাকে। তাই ভ্রমণের আগে হোটেল বুকিং দিতে ভুলবেন না।
এশিয়া মহাদেশ

অন্যদিকে এশিয়া মহাদেশে বসন্ত কাল হচ্ছে ট্যুরের জন্য হাই টাইম। বসন্ত তার সৌন্দর্যের ডালি সাজায় এসময়ে। প্রকৃতি তার রুপ দিয়ে সাজাই নিজেকে। কখন সে সাজে বসন্তের ফুল দিয়ে কখনো বা সাজে গাছেন নতুন পাতার রঙে। বেশির ভাগ পর্যটক ডিসেম্বর থেকে মার্চ এসময় এশিয়াতে ভ্রমণে আসেন। এশিয়ার অঞ্চলের ঠাণ্ডা ইউরোপের মত নয়। তাই শীতের সময় অনেকেই ট্যুরে বেরিয়ে পরেন।
আর গরমের সময়ে এশিয়াতে লো সিজন চলে ট্যুরের জন্য। এশিয়াতে এপ্রিল থেকে আগস্ট এ সময়ে অনেকেই ট্যুর প্ল্যান করেন না। অসহনীয় গরমে ট্যুরের মজা সাজাতে পরিণত করবে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পরেন গরমে। বাচ্চাদের নিয়ে যাতায়েত করতে সমস্যা হয়।
দেশ হোক কিংবা দেশের বাইরে যেখানেই আপনি ট্যুরে যান তার আগে জেনে নিবেন ঐ অঞ্চলের আবহাওয়া কেমন চলছে। আর এখন ইন্টারনেটে একটা ক্লিক করলেই জানা যাই এসব বিষয়ে।
থাইল্যান্ড ভ্রমনের সেরা সময়

থাইল্যান্ডের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের আবহাওয়া একদমই ভিন্ন। আবার শহর এলাকায় একরকম আর দ্বীপ এলাকায় অন্যরকম। হয়তো শহরে উষ্ণ আবহাওয়া আর দ্বীপে শীতল। তবে সাধারণত পর্যটকদের বিচারে বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস অবধি থাইল্যান্ডের আবহাওয়া ঘুরাঘুরির জন্য একদম পারফেক্ট। এই সময়টায় থাইল্যান্ডের ঋতু হিসেবে শীতকাল চলে।
তাই গরম থাকে সহনীয় পর্যায়ের। রোদ থাকলেও রোদের তাপ গায়ে লাগে না কিংবা তা সহ্য করার মতোই থাকে। আকাশ থাকে বৃষ্টিমুক্ত। তবে মাঝেমধ্যে আকাশে মেঘের ঘনঘটা লক্ষ্য করা যায়। এবং ক্ষনিকের জন্য এক স্নিগ্ধ আবহাওয়া উপহার দিয়ে বিদায় নেয় সাময়িক বৃষ্টি।
আবার, যদি কেউ থাইল্যান্ডের সবুজ নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আর প্রাকৃতিক দৃশ্য পেতে চায় তবে গরমকাল ভালো হবে। তখন প্রকৃতি একদম ঝলমলে ছবির মতোই স্বচ্ছতা ধারণ করে। এপ্রিল থেকে জুলাই মাস এই জন্য শ্রেয়। তবে এ সময়ে গ্রীষ্মকাল চলে। তাই গরম আবহাওয়া বিরাজমান থাকে। এবং তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে।

এপ্রিলের শেষ দিকে থাইল্যান্ডের আবহাওয়া অত্যধিক আর্দ্র হয়ে যায় এবং গরম পর্যটকদের জন্য অসহনীয় মাত্রায় চলে যায়। তবে এপ্রিলের শেষ থেকে অক্টোবর অবধি থাইল্যান্ডে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
এমনকি জায়গাভেদে বন্যা পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়। গ্রামীন জনজীবন বিপন্ন হয় এবং নৌকা সংকট দেখা দেয়। তাই, সাধারণত এই সময়টায় থাইল্যান্ডে ঘুরতে যাওয়া মোটেও উপভোগ্য হবার কথা নয়।
হাই সিজনে ট্যুর
হাই সিজন ট্যুরের জন্য সবচাইয়ে উপযুক্ত হওয়ার কারণে এসময়ে হোটেল ভাড়া থেকে শুরু করে পরিবহন খরচ সবকিছু একটু বেশি থাকে। আর এসময়ে হোটেল খালি পেতেও কষ্ট হয়। তাই যদি হাই সিজনে বের হবেন বলে মন স্থির করেন তাহলে হোটেল বুক করে নিবেন আগে থেকেই। এতে থাকার জায়গা নিয়ে দুরচিন্তা করতে হবে না।
অনেক দেশ বা অঞ্চলে ফেস্টিভ্যাল সিজনে পর্যটকরা বেশি আসেন। তাই আপনি যেখানে যে সময়ে যেতে চাইছেন সেসময়ে কোন ফেস্টিভ্যাল চলছে কিনা সেটির দিকেও নজর দিবেন।
লো বা ডাউন সিজনের ট্যুর
অনেকেই আছেন হাই সিজনে মানুষের কোলাহল থেকে রেহাই পেতে লো সিজন গুলোতে বের হন। লো সিজনে হোটেল আগে থেকে বুকিংয়ের ঝামেলা নেই। আর হোটেল ভাড়াও কম থাকে।
তবে লো সিজনের মূল সমস্যা হচ্ছে চ্যালেঞ্জিং আবহাওয়া। অনেক সময়ে দেখা যায় অসহনীয় গরম বা প্রচন্ড ঠাণ্ডা নয়তো খুব বৃষ্টি। তাই যদি আপনি লো সিজনেই বের হবেন বলে ঠিক করে ফেলেন তাহলে জেনে নিবেন উপযোগী আবহাওয়া আছে কিনা। আর সাথে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিতে ভুলবেন না। বেশির ভাগ সময়েই দেখা যায় লো সিজনে আবহাওয়া খুব একটা খারাব না। তাই আগে থেকে জানতে হবে আর যদি যাবেন বলে ঠিক করেই ফেলেন তবে সে অনুযায়ি প্রস্তুতি নিয়ে ট্যুর প্লান সাজান।
এড়িয়ে চলুন
তবে সবস্থানে লো সিজনে না যাওয়াই ভালো, যেমন পাহাড়ি অঞ্চলে ভারি বর্ষাই যাওয়া উচিত না। কারণ এসময়ে পাহাড় ধসের মাত্রা বেড়ে যায়। আর রাস্তায় দুর্ঘটনার প্রবণতাও বেড়ে যায়। আর শীতপ্রধান দেশে তুষারপাতের সময় না যাওয়াই ভালো।
আপনি যেস্থানেই যেসময়েই যান তার আগে থেকে জেনে নিবেন সেথানের অবস্থা কেমন আছে। আমার পরামর্শ হচ্ছে সবসময়ে শুধু আবহাওয়া না দেখে যেখানে যাবেন সেখানকার সামাজিক ও রাজনোইতিক অবস্থা কি সেবিষয়ে বিস্তারিত জানা। যাতে ট্যুরে গিয়ে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার সম্মুখীন না হন।